লালন সাঁইজির ১০০টি বাণী গুরুত্বপূর্ণ কিছু সাঁইজির বাণী:
গুরুত্বপূর্ণ কিছু লালন সাঁইজির বাণী:
১. "সব লোকে কয়, লালন কী জাত সংসারে। লালন বলে, জাতির কী রূপ, দেখলাম না এ নজরে॥" (জাতির ধারণা বা ভেদাভেদ নিয়ে প্রশ্ন তুলে মানবধর্মকেই বড় করে দেখা হয়েছে।)
২. "খাঁচার ভিতর অচিন পাখি কেমনে আসে যায়।" (দেহ বা খাঁচার মধ্যে আত্মার বা 'মনের মানুষ'-এর আগমন-নির্গমন বা অবস্থান নিয়ে গভীর দার্শনিক প্রশ্ন।)
৩. "মিলন হবে কত দিনে আমার মনের মানুষের সনে।" (পরমাত্মা বা ইশ্বর (মনের মানুষ) এর সাথে মিলনের জন্য ব্যাকুলতা প্রকাশ।)
৪. "এমন মানবজনম আর কি হবে। মন যা করো ত্বরায় করো এই ভবে॥" (মানব জনম দুর্লভ, তাই এই জীবনেই সাধন বা কর্ম করে নেওয়ার তাগিদ।)
৫. "জাত গেলো জাত গেলো বলে, একি আজব কারখানা। সত্য কাজে কেউ নয় রাজি, সব দেখি তা না না না॥" (জাতিভেদ নিয়ে সমাজে যে বাড়াবাড়ি চলে, তার সমালোচনা।)
৬. "বাড়ির কাছে আরশি নগর, সেথা এক পড়শি বসত করে। আমি একদিনও না দেখলাম তারে॥" (নিজের ভেতরের 'মনের মানুষ' বা পরমাত্মাকে চিনতে না পারার আফসোস।)
৭. "কে তোরে কি দেয় বলিস নে তারে। মনের কথাটি গোপনে রাখবি, জানবি তা তুই কিসে॥" (সাধনা বা আধ্যাত্মিক পথের কথা গোপন রাখার নির্দেশ।)
৮. "গুরুপদে যার নাই রতি, সে কি বোঝে সাঁইর লীলাগতি।" (গুরু বা পথপ্রদর্শকের প্রতি ভক্তি ছাড়া সাধন পথে অগ্রগতি অসম্ভব।)
৯. "আমার আপন খবর আপনার হয় না।" (নিজেকে জানা বা আত্ম-উপলব্ধির গুরুত্ব।)
১০. "ভবের হাট বাজার যত, সব মিছে তার ভবেরই পথ।" (জগতের সবকিছু ক্ষণস্থায়ী ও মিথ্যা, কেবল সাধন পথই সত্য।)
১১. "সহজ মানুষ ভজে দেখ না রে মন, কি আনন্দের ফল পাবি।" (সহজ-সরল মানবতা ও প্রেমের মাধ্যমে ঈশ্বর লাভ সম্ভব।)
১২. "গোপনে যে বেশ্যার ভাত খায়, তাতে ধর্মের কি ক্ষতি হয়। লালন বলে জাত কারে কয়, এ ভ্রম তো গেল না॥" (ধর্মের নামে ভণ্ডামি ও জাত-পাতের ভেদাভেদের তীব্র সমালোচনা।)
১৩. "দিন থাকিতে দিনের সাধন কেন করলে না।" (সময় থাকতে সাধন বা আত্ম-অনুসন্ধান না করার জন্য আক্ষেপ।)
১৪. "ক্ষান্ত দে রে মনের ভ্রম, ও তুই ক্ষান্ত দে রে মনের ভ্রম।/ মনের ভুলে হয় মনের পতন, মনের পাপে মন-দমন॥" (মনের ভ্রম বা ভুল ধারণা ত্যাগ করার উপদেশ।)
১৫. "যেখানে সাঁইর বারামখানা, সেথায় কি আর ভেদ-বিভেদ রয়।" (যেখানে সৃষ্টিকর্তার নিবাস, সেখানে কোনো ভেদাভেদ থাকতে পারে না।)
দেহতত্ত্ব বিষয়ক লালন সাঁইজির বাণী
১. "আলেক শহরে আজব লীলা, মানুষে মানুষে হয় খেলা। দেহ-নগরে বসত করে, অধর চাঁদ সে ধরা পড়ে॥" (দেহই সেই 'আলেক শহর', যেখানে অধর চাঁদ বা পরমাত্মাকে ধরা যায়।)
২. "এই মানুষেরে চেনা গেল না। আপন ঘরের খবর না নিলে, বাইরে খুঁজে কী ফল হবে॥" (নিজের দেহ বা আত্মাকে না চিনলে বাইরের জগতে ঈশ্বরকে খুঁজে পাওয়া বৃথা।)
৩. "যা আছে ভাণ্ডে তাই আছে ব্রহ্মাণ্ডে। জানলে না রে মন, দেহের মর্ম ভেদ॥" (এই মানবদেহের (ভাণ্ড) মধ্যেই সমগ্র সৃষ্টি বা ব্রহ্মাণ্ডের রহস্য লুকিয়ে আছে।)
৪. "তিন পাগলে হলো মেলা নদে এসে, তোরা কেউ যাসনে ও পাগলের কাছে। তিন পাগলের প্রধান পাগল, বেদে মানে না॥" (দেহের মধ্যে ক্রিয়াশীল ত্রিবেণী বা শ্বাস-প্রশ্বাসের মাধ্যমে সাধনার ইঙ্গিত।)
৫. "মানুষ ভজলে তুই সোনার মানুষ হবি। দেহের মর্ম জানলে, তবে অচিনেরে পাবি॥" (দেহ সাধনার মাধ্যমেই সাধারণ মানুষ 'সোনার মানুষ' বা সিদ্ধপুরুষে পরিণত হতে পারে।)
৬. "আমার ঘরের চাবি পরের হাতে। কেমনে খুলিব সে তালা, পরশে কি দেবে এতে॥" (দেহরহস্য বা সাধনমার্গের চাবি থাকে গুরুর হাতে, গুরুর কৃপা ছাড়া সেই রহস্য জানা যায় না।)
৭. "দেখ না মন, দিবা-নগরে জ্বলে বাতি। দিবারাতি না সেখানে, কেবল নিত্য-জ্যোতি॥" (দেহের অভ্যন্তরে সর্বদা এক দিব্য আলো জ্বলছে, যা সাধনার মাধ্যমে উপলব্ধি করা যায়।)
৮. "কোথায় রবে সে চাঁদ, তার খোঁজ করো রে মন। সহজে মিলবে না সে, দম-সাধনা তার কারণ॥" ('দম' বা শ্বাস-প্রশ্বাসের নিয়ন্ত্রণ এবং সাধনার মাধ্যমে সেই অধর চাঁদ বা মনের মানুষকে পাওয়া যায়।)
৯. "এই জনমে বা না চিনিলি, আর কবে চিনবি! মনুষ্য জনম সাধন ফলে, নলে পাবি না॥" (মানব জনম সাধনার জন্য শ্রেষ্ঠ, এই সুযোগ হারালে আর লাভ করা যাবে না।)
১০. "যৌবন কিসে হলো পার, সে তো নিজেই জানে না। কূলের আশা করে শেষে, ফেরে সে কিনারায়॥" (দেহ এবং জীবনের মূল্য বুঝতে না পেরে সময় নষ্ট করার আক্ষেপ।)
লালন সাঁইজির দেহতত্ত্বের মূল কথা হলো: দেহকে অবহেলা নয়, বরং এর মধ্যেই নিহিত রহস্যকে উদ্ঘাটন করার মাধ্যমেই সৃষ্টিকর্তার সন্ধান লাভ করা সম্ভব।
সমাজ ও জাতিভেদ নিয়ে লালন সাঁইজির বাণী
১. "সব লোকে কয়, লালন কী জাত সংসারে। লালন বলে, জাতির কী রূপ, দেখলাম না এ নজরে॥" (জাতির কোনো দৃশ্যমান রূপ নেই, তাই লালন জাতিভেদ মানতে রাজি নন। এটি তাঁর সবচেয়ে বিখ্যাত বাণী।)
২. "জাত গেলো জাত গেলো বলে, একি আজব কারখানা। সত্য কাজে কেউ নয় রাজি, সব দেখি তা না না না॥" (জাতি নিয়ে মানুষের বাড়াবাড়ি এবং সত্যিকারের ভালো কাজে মানুষের অনীহা নিয়ে আক্ষেপ।)
৩. "গোপনে যে বেশ্যার ভাত খায়, তাতে ধর্মের কী ক্ষতি হয়। লালন বলে জাত কারে কয়, এ ভ্রম তো গেল না॥" (ধর্মের নামে ভণ্ডামি ও সমাজে প্রচলিত দ্বৈত আচরণের মাধ্যমে জাতিভেদের অসারতা প্রমাণ করা হয়েছে। তিনি প্রশ্ন তুলেছেন, জাত আসলে কী?)
৪. "ব্রাহ্মণ-চণ্ডাল এক ঘাটেতে, কিসে ভিন্ন হয়! জাতি ভেদে ভিন্ন কথা, সত্য তো নয়॥" (ব্রাহ্মণ এবং তথাকথিত নিম্ন বর্ণের মানুষ একই জল ব্যবহার করে, তবে তাদের মধ্যে পার্থক্য কোথায়? লালন বলেন, জাতিভেদের কথাটি মিথ্যা।)
৫. "যদি সুজন হবি, মন কর সহজ। সহজে মিলবে সাঁই, কর না খোঁজ॥" (জাতিভেদ ত্যাগ করে সরল ও উদার মনের মানুষ হলেই কেবল পরমাত্মার (সাঁই) সন্ধান পাওয়া যায়।)
৬. "কেউ মালা কেউ তসবী গলে, তাইতে কি জাত ভিন্ন বলে। যাওয়া কিম্বা আসার বেলায়, জাতের চিহ্ন রয় কারে॥" (জন্মের সময় বা মৃত্যুর পর কারো শরীরে কোনো জাতের চিহ্ন থাকে না—মালা বা তসবী ধারণ করে কৃত্রিমভাবে জাত তৈরি করা হয়েছে।)
৭. "ভোর হলো না মনের আন্ধার, ঘুচলো না রে ঘোর। সবে বলিস মানুষ জাতি, তা-ই বা কেমন তোর॥" (মানুষেরা নিজেদের 'মানুষ জাতি' বললেও ভেদাভেদ দূর হচ্ছে না, যা নিয়ে লালন সংশয় প্রকাশ করেছেন।)
প্রেমতত্ত্ব ও ভক্তি নিয়ে লালন সাঁইজির বাণী
১. "মিলন হবে কত দিনে, আমার মনের মানুষের সনে। চাতক প্রায় অহর্নিশি চেয়ে আছি, কালো শশী হবো বলে চরণদাসী। ও তা হয় না কপাল গুণে॥" (পরমাত্মার প্রতি গভীর প্রেম ও বিরহ। ভক্ত চাতক পাখির মতো কেবল সেই 'মনের মানুষ'-এর (পরমাত্মা) চরণধূলি লাভের জন্য অধীর অপেক্ষায় থাকে।)
২. "ভবের বাজারে যত, সকলই তো মিছে। এক সত্য ধন প্রেমের ধন, মন-রাঙা রূপ আছে॥" (দুনিয়ার সবকিছুর চেয়ে প্রেমই একমাত্র সত্য ধন, যা মনের রঙে রাঙানো।)
৩. "যে প্রেম করে সে জানে, আমার মনের মানুষের সনে। যখন ও-রূপ স্মরণ হয়, থাকে না লোকলজ্জার ভয়॥" (মনের মানুষ বা ইশ্বরের প্রতি তীব্র প্রেম মানুষকে সকল লোকলজ্জা ও সামাজিক ভয় থেকে মুক্ত করে।)
৪. "গুরু পদে যার নাই রতি, সে কি বোঝে সাঁইর লীলাগতি। অবিশ্বাসীর হৃদয়ে প্রেমের, বাতি জ্বলে না॥" (গুরুভক্তি বা 'রতি' (গভীর টান) ছাড়া সাঁইজি বা সৃষ্টিকর্তার লীলা বোঝা অসম্ভব, এবং অবিশ্বাসীর হৃদয়ে প্রেম জাগ্রত হয় না।)
৫. "মানুষ গুরু নিষ্ঠা যার, সর্ব সাধন সিদ্ধ হয় তার। নিত্য বস্তু হবে লাভ, আর কি সন্ধানে॥" (গুরুই হচ্ছেন সাক্ষাৎ 'মানুষ রূপী ইশ্বর'। গুরুর প্রতি সম্পূর্ণ নিষ্ঠা বা ভক্তি থাকলে সকল আধ্যাত্মিক সাধনা সফল হয়।)
৬. "প্রেম রসে যার মন মজিলো, ভবের হাটে সে কি আর চলে! কুল মজায়ে কলঙ্ক হলো, তবুও মন তার যায় না ভুলে॥" (যিনি একবার ঐশ্বরিক প্রেমের রসে মজেছেন, তিনি আর পার্থিব মায়ায় জড়ান না; কুল-মান ত্যাগ করেও সেই প্রেমই আঁকড়ে থাকেন।)
৭. "অমৃত মেঘের বারি, মুখের কথায় কি মেলে। চাতক স্বভাব না হলে, ভক্তির জ্যেষ্ঠ সেহি ভক্তি॥" (চাতক পাখির মতো একনিষ্ঠ ভক্তি ও সাধনা ছাড়া অমৃততুল্য জ্ঞান বা প্রেম লাভ করা যায় না। লালন একেই শ্রেষ্ঠ ভক্তি বলেছেন।)
৮. "আমি অপার হয়ে বসে আছি, ওহে দয়াময়। পারে লয়ে যাও, আমায়॥" (ভক্তের অসহায় আত্মসমর্পণ এবং দয়াময় (সাঁইজি)-এর কাছে উদ্ধারের জন্য আকুতি, যা প্রেমের সর্বোচ্চ রূপ।)
লালন সাঁইজির প্রেম ও ভক্তি হলো আত্মাকে পরিশুদ্ধ করে অভেদ জ্ঞান লাভের মূল রাস্তা।
বিরহ ও আত্ম-উপলব্ধি নিয়ে লালন সাঁইজির বাণী
১. "আমি অপার হয়ে বসে আছি, ওহে দয়াময়। পারে লয়ে যাও, আমায়॥" (সৃষ্টিকর্তাকে (দয়াময়) খুঁজে না পাওয়ার কারণে সাধকের চরম অসহায়ত্ব ও আকুতি, যা বিরহের এক গভীর প্রকাশ।)
২. "খাঁচার ভিতর অচিন পাখি কেমনে আসে যায়। তারে ধরতে পারলে মন বেড়ি, দিতাম পাখির পায়॥" (নিজের ভেতরের অচিন পাখি বা আত্মাকে ধরতে না পারার আফসোস বা ব্যর্থতা, যা গভীর আত্ম-উপলব্ধি থেকে আসে।)
৩. "সময় গেলে সাধন হবে না। দিন থাকতে দিনের সাধন কেন করলে না॥" (সুযোগ থাকতে নিজের ভেতরের সত্তার (সাধন) সন্ধান না করার জন্য তীব্র আক্ষেপ ও অনুশোচনা। এটি আত্ম-উপলব্ধিরই একটি অংশ।)
৪. "বাড়ির কাছে আরশিনগর, সেথা এক পড়শী বসত করে। আমি একদিনও না দেখলাম তারে॥" (নিজ দেহের মধ্যেই পরমাত্মা বা 'পড়শী' থাকা সত্ত্বেও তাকে চিনতে না পারার বেদনা ও খেদ।)
৫. "যে জন আছে মন-ভাণ্ডারে, সেই তো আমার অচিন রে। তবু সে ভেদ জানতে নারি, ফিরি দেশ দেশান্তরে॥" (মনের মধ্যেই ঈশ্বর থাকা সত্ত্বেও তাকে জানতে না পেরে কেবল বাইরের জগতে খুঁজে বেড়ানোর ভ্রান্তি ও ব্যর্থতা।)
৬. "আমার ঘরের খবর আপনার হয় না। আমার মন যারে চায়, সে তো অন্য জনা॥" (নিজের ভেতরের সত্যকে (ঘরের খবর) উপলব্ধি করতে না পারার যন্ত্রণা এবং মনের মানুষ বা পরমাত্মার সঙ্গে দূরত্ব অনুভব করা।)
৭. "চিরদিন পুষলাম এক অচিন পাখি। তবু তারে না চিনিলাম, আমার কী দোষে!॥" (সারা জীবন দেহ বা 'খাঁচার' মধ্যে আত্মাকে পুষে রেখেও তাকে জানতে না পারার দুঃখ।)
৮. "কোথায় পাবি তারে? তোর আপন দেহের ঘরে, দেখ রে সে বিরাজে॥" (বাহিরে না খুঁজে নিজের দেহের মধ্যেই সেই পরম সত্তাকে উপলব্ধি করার উপদেশ, যা বিরহের অবসান ঘটায়।)
এই বাণীগুলো লালন সাঁইজির সাধন মার্গের সারমর্ম, যেখানে আত্ম-অনুসন্ধানই হলো সকল প্রাপ্তির মূল চাবিকাঠি।
গুরুতত্ত্ব: গুরুর অপরিহার্যতা
লালনের মতে, দেহতত্ত্ব বা আত্ম-উপলব্ধির সাধন পথ অত্যন্ত কঠিন ও রহস্যময়। এই পথে গুরুর কৃপা ও নির্দেশনা ছাড়া এক পা-ও এগোনো সম্ভব নয়।
১. "মানুষ গুরু নিষ্ঠা যার, সর্ব সাধন সিদ্ধ হয় তার। নিত্য বস্তু হবে লাভ, আর কি সন্ধানে॥" (মানুষ রূপী গুরুর প্রতি যার পূর্ণ ভক্তি বা নিষ্ঠা আছে, তার সকল সাধনাই সফল হয়। অন্য কোনো উপায়ে চিরন্তন সত্য লাভ করা যায় না।)
২. "ঘরের চাবি পরের হাতে, কেমনে খুলিব সে তালা। পরশে কি দেবে এতে, মূলধন সাধিলে ফেরে॥" (দেহের মধ্যে যে সাধন-রহস্য (মূলধন) লুকিয়ে আছে, তার চাবি গুরুর হাতে। গুরুর নির্দেশ বা কৃপা ছাড়া সেই রহস্য উদ্ঘাটন করা যায় না।)
৩. "আমি অপার হয়ে বসে আছি, ওহে দয়াময়। পারে লয়ে যাও, আমায়॥" (এই গানে 'দয়াময়' বলতে গুরুকেও বোঝানো হয়। সাধক গুরুর কাছেই এই ভব-সাগর পার করে দেওয়ার জন্য সম্পূর্ণভাবে আত্মসমর্পণ করেন।)
৪. "গুরু বিনে কে বোঝে মর্ম, সাধন বিনে কি হয় কর্ম। লালন বলে, ভবের মাঝে, গুরু-পদই সার॥" (গুরু ছাড়া সাধনার মর্ম কেউ বোঝে না। তাই এই পৃথিবীতে গুরুর চরণই হলো একমাত্র সত্য ও ভরসা।)
৫. "মানুষ ভজলে সোনার মানুষ হবি। মানুষ ছাড়া ক্ষ্যাপা রে তুই, মূল হারাবি॥" (লালনের কাছে গুরুই শ্রেষ্ঠ মানুষ বা 'সোনার মানুষ'। তাঁকে ভজনা (ভক্তি) করলে তবেই নিজেকে বিশুদ্ধ মানুষ হিসেবে তৈরি করা সম্ভব হয়। গুরুকে উপেক্ষা করলে আসল লক্ষ্য থেকে বিচ্যুত হতে হয়।)
৬. "কেন রে মন সাধুর সঙ্গ নিলি না। সময় গেলে সাধন হবে না॥" (সাধু বা গুরু-সঙ্গ হলো সাধন পথের প্রথম শর্ত। সাধু-সঙ্গ ছাড়া সময় নষ্ট করার আক্ষেপ প্রকাশ করেছেন।)
🔑 গুরু: রহস্যের চাবিকাঠি
লালন সাঁইজির গুরুতত্ত্বের সারমর্ম হলো:
মানব গুরু: গুরু হলেন রক্ত-মাংসে গড়া একজন মানুষ, কোনো দেব-দেবী নন। এই মানুষ রূপী গুরুর মাধ্যমেই পরমাত্মাকে পাওয়া যায়।
দেহ-রহস্যের জ্ঞাতা: গুরু দেহের ভেতরের 'অচিন পাখি' বা 'মনের মানুষ'-কে চেনার গুপ্ত কৌশল (দম-সাধনা, নিরিখ) শিখিয়ে দেন।
প্রেম ও ভক্তির আধার: গুরুর প্রতি ভক্তি না থাকলে সাধন পথে এক পা-ও এগোনো যায় না। গুরুই শিষ্যের মধ্যে সেই প্রেম বা ভক্তির জন্ম দেন।
Blogger Comment
Facebook Comment